রক্তের বিভিন্ন গ্রুপিং , ট্রান্সফিউশন ও মা-বাবা গ্রুপিং সম্পর্কে বর্ননা

05/12/2010 15:14

ইমিউনোলজীর ব্যপারটি একটু ঝামেলা, তবে সহজ ভাষায় ব্যাখা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমাদের রক্তের লোহিত কণিকা বা Red blood cell (RBC)-এর গায়ে কয়েক ধরণের প্রোটিন থাকে। যেমন A, B, Rh প্রোটিন ইত্যাদি।

১।যার RBC-তে A প্রোটিন আছে, তার ব্লাডগ্রুপ   A
২।যার RBC-তে B প্রোটিন আছে, তার ব্লাডগ্রুপ   B
৩।আর যার RBC-তে দু'টোই আছে, তার ব্লাডগ্রুপ  AB
৪।যার RBC-তে দু'টোর একটাও নেই, তার ব্লাডগ্রুপ হলো  O

৩য় প্রোটিন - অর্থাৎ, Rh - এটা যার রক্তে থাকবে, সে পজিটিভ, যার থাকবে না সে নেগেটিভ।

ধরুন, আপনার রক্তে A এবং Rh  প্রোটিন আছে - তাই আপনার ব্লাডগ্রুপ হবে A +ve

আবার ধরুন, আপনার বন্ধুর রক্তে A এবং B আছে, কিন্তু Rh  নেই - তাহলে তার ব্লাডগ্রুপ হবে AB -ve

 

এখন, ব্লাড ট্রান্সফিউশনের কিছু নিয়ম আছে। আবিষ্কারক কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের নামানুসারে একে ল্যান্ডস্টিনার'স ল বলে।

যার শরীরে A প্রোটিন নাই (অর্থাৎ ব্লাডগ্রুপ B), তাকে A ব্লাডগ্রুপের রক্ত দিলে শরীরে রিয়্যাক্সন হবে, নতুন দেয়া রক্ত রিজেক্ট করবে, এমনকি মারাও যেতে পারবে।

ঠিক তেমনি ব্লাডগ্রুপ A ব্যক্তির লোকের শরীরে B-গ্রুপের রক্ত দিতে গেলেও একই সমস্যা হবে।

আবার ধরুন, দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে A আর B ম্যাচ করতে পারলেন। কিন্তু আরেকটা প্রোটিন/এ্যান্টিজেন যে রয়ে গেছে - Rh!
যার শরীরে Rh ফ্যাক্টর নাই (অর্থাৎ Rh -ve), তাকে Rh +ve ব্লাড দিতে গেলেও একই ধরণের রিয়্যাক্সন হবে - পুরো ব্লাড রিজেক্ট করবে।

A গ্রুপের দাতা শুধু A এবং AB গ্রুপের গ্রহীতাকে রক্ত দিতে পারবেন। (এখানে খেয়াল করুন, দাতা এবং গ্রহীতাদের সবারই রক্তে A প্রোটীন কমন আছে)।
তেমনি B গ্রুপের দাতা শুধু B এবং AB গ্রুপের গ্রহীতাকে রক্ত দিতে পারবেন। (এখানে সবার মাঝে B কমন)
আর AB গ্রুপের দাতা শুধু AB গ্রুপের গ্রহীতাকে রক্ত দান করতে পারবেন।

এই জন্য, সবচাইতে নিরাপদ উপায় হলো: যিনি রক্ত দেবেন তাঁর শরীরে কোনো এ্যান্টিজেন/প্রোটিন-ই না থাকা - অর্থাৎ ব্লাডগ্রুপ O-ve। তাই এদেরকে ইউনিভার্সাল ডোনার বলা হয় - এরা যে কাউকে রক্ত দিতে পারেন।

ঠিক তেমনি এর উল্টোও আছে - ইউনিভার্সাল রেসিপিয়েন্ট। এদের ব্লাড গ্রুপ হলো AB +ve - এদের A, B এবং Rh সব প্রোটিনই আছে। কাজেই যেকোনো ব্লাডগ্রুপই গ্রহণ করতে পারবে।

মা-বাবা গ্রুপিং সমস্যা

বিয়ের আগে এই জিনিসটা অর্থাৎ ছেলে ও মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করে বিয়ে করা উচিত। তা না হলে স্বামী-স্ত্রীর হয়ত তেমন কিছুই হবেনা তবে তাদের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্কের কারনে ও রক্তের মাধ্যমে বেশ কিছু সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ হতে পারে যেমন, এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস বি ও সি, ডায়াবেটিস, লিউকোমিয়া, সিজোফ্রেমিয়া ইত্যাদি। সেক্সুয়্যাল প্রবলেম যেমন স্বামী-স্ত্রীর নরমাল প্রোডাক্টিভিটি ও নষ্ট হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া নামের এই রোগটি বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর। বাবা-মা দুইজনই এই রোগের বাহক হলে সন্তান জন্মের পরই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং সাধারনত ২১ বছরের বেশি বাঁচে না। এবং এতসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

ব্যাপারটা নাহয় আমিও একটু ব্যাখ্যা করিঃ
যদি কোন নেগেটিভ রক্তের মহিলার সাথে পজিটিভ রক্তের পুরুষের বিয়ে হয়, তবে তাদের প্রথম বাচ্চা হবে পজিটিভ রক্তের, অর্থ্যাৎ বাচ্চার রক্তে Rh প্রোটিন থাকবে যা প্রকট বৈশিষ্ট্যের। প্রকট বৈশিষ্ট্য হলো যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। পজিটিভ রক্তে যেহেতু Rh এন্টিজেন/প্রোটিন ছিলো, তাই বাচ্চা পজিটিভ রক্তের হবে। সবচেয়ে বড় ভয়টা এখানেই, মা নেগেটিভ রক্তের বলে বাচ্চার জন্মের সময় অমরার মাধ্যমে বাচ্চার রক্তে থাকা Rh এন্টিজেন মায়ের দেহে প্রবেশ করে (কারন বাচ্চা যেহেতু পজিটিভ রক্তের সুতরাং তার রক্তে Rh থাকবেই এবং অমরা মানে বাচ্চা যেখানে মায়ের উদরে থাকে)। এখন মার রক্তে Rh নেই কিন্তু সন্তানের কারনে ঢুকে পড়েছে। তাই মায়ের নেগেটিভ রক্ত আগত Rh কে শত্রু ভাবে এবং মায়ের দেহে অ্যান্টিবডি (বুঝার সুবিধার্তে অ্যান্টিবডিকে অ্যান্টিভাইরাসও ধরে নিতে পারেন) তৈরি করে। যার ফলে মায়ের রক্ত অ্যান্টিবডি/অ্যান্টিভাইরাস সমৃদ্ধ যা কোন রকমের পজিটিভ রক্ত পেলেই সেটাকে ধ্বংস করে ফেলে। এই অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগেই প্রথম বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় বলে প্রথম বাচ্চা কোনোরকমে বেচে গেলেও পরবর্তী বাচ্চা গুলো আর বাঁচেনা। কারন বাবার রক্ত পজিটিভ, মায়ের রক্ত পজিটিভ কিছু পেলেই ধ্বংস করে ফেলে। এইজন্য দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগেই মারা যায় মানে ভ্রুনে থাকতেই মৃত্যুবরন করে।